ডিসি কলেজের স্টাফ কহিউর আক্তারের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কমিটি হচ্ছে

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার ডিসি কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর কহিউর আক্তার প্রকাশ কহিনুরের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কহিউর আক্তারের চিকিৎসা নিয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সে সময়ে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সহ সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলা ও গাফেলতির অভিযোগ এনে মৃত কহিউর আক্তারের স্বামী ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কর্তৃক কক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের কাছে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। রোববার ১ নভেম্বর এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে এ আবেদনটি করা হয়। বিশ্বস্ত সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনে বলেন, গত ২৯ অক্টোবর তার সহধর্মিণী কহিউর আক্তারের কাঁশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সাথে সাথে তাকে জেলা সদর হাসপাতাল নিয়ে যান। তারআগে মোবাইল ফোনে পরিচয় দিয়ে বিষয়টি হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহীন আবদুর রহমানকে অবহিত করেন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। রাত ১২ টার দিকে তার স্ত্রী সহ হাসপাতালে পৌঁছালে হাসপাতালের নিচ তলায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন-তার সাথে কথা বললে, তিনি রোগীকে তৃতীয় তলায় নিয়ে যেতে বলেন। তৃতীয় তলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লিফটের কাছে গিয়ে তিনি দেখেন লিফট বন্ধ। সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও গুরতর অসুস্থ তার স্ত্রীকে হেঁটে তিনি তৃতীয় তলায় নিয়ে যেতে পারেননি। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের বিষয়টি জানালে তারা বিষয়টির কোন গুরুত্ব দেয়নি। মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তখন হাসপাতালের কারো কোন রেসপন্স না দেখে আর্থচিৎকার করতে থাকলে অনেকক্ষণ পর লিফট চালু করে এবং তার স্ত্রী কহিউর আক্তারকে তৃতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তৃতীয় তলায় গিয়ে তার স্ত্রী’র অক্সিজেন স্যাচুরেশন চেক করার পর অক্সিজেন লেভেল একটু কম পাওয়া যায়। একই সময়ে তার স্ত্রী তাকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য আকুতি জানাতে থাকে। তারপর কহিউর আক্তারকে অক্সিজেন দিয়ে স্যাচুরেশন লেভেল চেক করলে লেভেল স্বাভাবিক ৯৬ পাওয়া যায়। এরপর অক্সিজেনের লাইনটা খুলে দিয়ে ৩৮ নম্বর একটা রুমে নিয়ে আরেকটা অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে কহিউর আক্তারকে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সে সিলিন্ডারে কি পরিমাণ অক্সিজেন আছে কিংবা নাই, তা যাচাই না করেই কহিউর আক্তারকে দ্বিতীয় সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া হয়। মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের দাবি মূলত সে সিলিন্ডারে কোন অক্সিজেন ছিলোনা। সিলিন্ডারটি সম্পূর্ণ খালি, অক্সিজেন শূন্য। খালি অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকেই কহিউর আক্তারকে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া হয়।

এরপর কহিউর আক্তার এর কাশি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নার্সদের দরজায় গিয়ে নাড়া দিলে নার্সেরা ঘুম থেকে উঠে সে বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলেন। মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখেন, ডাক্তারও ঘুম। পরে দরজা নাড়া দিলে ঘুম থেকে উঠে দরজার পাশে এসে তার স্ত্রীর অতিরিক্ত কাশির কথা বললে তখন উক্ত চিকিৎসক বলেন “কাশি দিলে আমি কি করবো? আমার কিছু করার নেই। বুকে বালিশ চাপা দিয়ে কাশি দিতে বলেন, সকালে দেখব” বলে জবাব দেন। কিন্তু সে পাষাণ ডাক্তারকে সকালে আর কহিউর আক্তারকে দেখতে হয়নি। সকাল হওয়ার আগেই কহিউর আক্তার পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তার দীর্ঘ ২ পৃষ্টার আবেদনে আরো বলেন, তার স্ত্রীর অবস্থা আরো গুরতর হয়ে গেলে তিনি ওয়ার্ড বয়কে বলেন, তাদের অক্সিজেন লেভেল মাপার যন্ত্র অক্সিমিটার আছে কিনা? ওয়ার্ড বয় তখন বলেন, আমার কাছে নাই। নার্সদের কাছে আছে। পরে নার্সদের কাছ থেকে অনেকটা জোর করে অক্সিমিটারটি নিয়ে এসে কহিউর আক্তারের অক্সিজেন স্যাচুরেশন পরিমাপ করে দেখা যায় তার অক্সিজেন লেভেল মাত্র ৬১। তখন মোহাম্মদ মিজানুর দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারকে ডাকেন। ডাক্তার সিলিন্ডারে অক্সিজেন আছে কিনা চেক না করে নার্সদের ডেকে পাঠালেন। পরে দেখা গেছে, ঐ সিলিন্ডারে কোন অক্সিজেন নাই।

পরে অন্য একটা সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়ার জন্য অন্য রুম থেকে বের করলেও সিলিন্ডারটি থেকে কহিউর আক্তারকে অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া হয়নি। তখন কহিউর আক্তার এর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৩৫ এ নেমে এসেছে। কহিউর আক্তার তখন প্রায় মৃত্যুর কূলে ঢলে পড়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে কহিউর আক্তারকে প্রায় মৃত অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় আইসিও-তে নিয়ে যান। এরপর মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আইসিও থেকে চিকিৎসকেরা বের করে দেন। বের হয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার ডেকে তাকে বলা হয়, তার স্ত্রী আর নেই। না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোর গোপনীয় সহকারী (সিএ টু ডিসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তার আবদেনে আরো বলেন-যে হাসপাতালে কোন ICU-HDU ছিলোনা, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছিলোনা, ছিলোনা কোন হাই ফ্লো নজল